প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে আব্দুল কালাম
এ.পি.জে.আব্দুল কালাম, ওরফে আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আব্দুল কালাম, ভারতের মিসাইল ম্যান, ভারত তথা যুব সমাজের আইকন যিনি একজন সাধারণ পেপার বিক্রেতা থেকে তাঁর কর্ম, নিষ্ঠা ও সরল জীবনযাপনের মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ সম্মানের পদে অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন! ভারতের এক জ্বলন্ত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলেন স্যার এ.পি.জে.আব্দুল কালাম।
এ.পি.জে.আব্দুল কালামের পরিচিতি:
আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আব্দুল কালাম ওরফে এ.পি.জে.আব্দুল কালাম তথা ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির রামনাথস্বামী জেলার রামেশ্বরামে অর্থাৎ বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরামের এক তামিল মুসলিম পরিবারে ১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। এই মহান আত্মার বাবা হলেন আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন, যিনি ছিলেন এক ইমামসাহেব ও মা হলেন গৃহবধূ অশিয়াম্মা। এই পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান হলেন আব্দুল কালাম স্যার! খুবই গরিব এই পরিবারের পঞ্চম সন্তান ছিলেন আব্দুল কালাম। ছোট থেকেই অনেক কষ্টে ও আধপেটা খেয়ে জীবনযাপন করতে হয়েছিলো তাঁকে।
শিক্ষা জীবন :
অত্যন্ত গরীব পরিবার থেকে সংগ্রাম করা সেই সাধারণ মানের ছাত্রটির শৈশব থেকেই ছিল শিক্ষাগ্রহণের তীব্রবাসনা। নিজ প্রচেষ্টায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর রামনাথপুরোম স্কোয়ার্টজ ম্যাটিকুলেশন স্কুল থেকে শিক্ষা সম্পূর্ন করার পর তিরুচিরাপল্লীর সেন্ট জোসেফস কলেজে ভর্তি হন ১৯৫৪ সালে তিনি এই কলেজ থেকেই পদার্থ বিজ্ঞানে স্মাতক হন।
এরপর তিনি ১৯৫৫ সালে মাদ্রাজে চলে আসেন। এখানেই তিনি মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বিমানপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন।
কর্মজীবন :
১৯৬০ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার এরোনোটিক্যাল ডেভলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্টে একজন বিজ্ঞানী হিসাবে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি ভারতীয় জাতীয় মহাকাশ গবেষণা কমিটিতে প্রখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. বিক্রম সারাভাইয়ের অধীনে কাজ করতেন। এরপর তিনি ১৯৬৯ সালে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় বদলি হন। যেখানে তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালের মাঝে ভারতের কৃত্রিম উপগ্রহ পিএসএলভি এবং এসএলভি-lll প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন এবং সফলও হয়েছেন। এরপর তিনি ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট শিলং, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট আহমেদাবাদ, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট ইন্ডোরের ভিজিটিং প্রফেসর হন। তিনি হায়দ্রাবাদের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজিতে এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদান করেন।
রাজনৈতিক জীবন রাষ্ট্রপতিত্ব :
অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রীত্ব কালে কে আর নারায়ণের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হন এবং নির্বাচনে জয়লাভও করেন। ২০০২ সালের ২৫শে জুলাই থেকে ২০০৭ সালের ২৫শে জুলাই পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ সময় তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণকাজের সাক্ষীও ছিলেন।
এ.পি.জে. আবদুল কালাম এর পুরস্কার ও সম্মান:
এ.পি.জে আব্দুল কালাম কর্ম মধ্য দিয়ে ভারতের বিকাশে এক বিশেষ ধরণের অবদান রেখেছেন। তাঁর বিশেষ কর্মের জন্য বিভিন্ন সময়ে পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে সেরা পুরস্কার ও সম্মান হলো – পদ্মভূষণ ১৯৮১ সালে, পদ্মবিভূষণ ১৯৯০ সালে , ভারতরত্ন ১৯৯৭ সালে, ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার ১৯৯৭ সালে, বীর সাভারকর পুরস্কার ১৯৯৮ সালে এবং রামানুজন পুরস্কার ২০০০ সালে ইত্যাদি আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।
এ.পি.জে. আবদুল কালাম এর মৃত্যু:
আবদুল কালাম 2015 সালের 27 জুলাই শিলংয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট এর একটি অনুষ্ঠান মঞ্চে ভাষণ দেওয়ার সময় হৃদ রোগে অক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে বেথানি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা জানান তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
Comments.