বিদায়বেলায় সিঁদুর খেলার মাহাত্ম্য!
দশমীর তিথিতে পুজো শেষ হওয়া মানেই উমার এবার স্বামীর ঘরে যাওয়ার পালা। ফের একটা গোটা বছরের অপেক্ষা। পুজো শেষে এখন সকলেরই চোখ পরের বছরের ক্যালেন্ডারের উপর। বিজয়া দশমীর সকাল থেকেই মুখ ভার সকলের। পুজো শেষ মানেই আনন্দও শেষ। তবে ঘরের মেয়েকে বিদায় জানাতে মনখারাপ ও চোখের জলে নয়, হাসি মুখে সিঁদুর খেলা হয়। সিঁদুর খেলার আক্ষরিক অর্থ হল সিঁদুর নিয়ে খেলা। বাঙালি হিন্দু মহিলারা বিজয় দশমীর দিন, দুর্গাকে বিদায় জানানোর আগে সিঁদুর খেলেন। এই প্রথাটি একটি নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম মেনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় এর মধ্যে দিয়ে সৌভাগ্য ও স্বামীদের দীর্ঘায়ু বয়ে আনা হবে।
মহিলারা উমাকে বরণ করার সময় সিঁদুর নিবেদন করেন। সেই সঙ্গে একেঅপরকে সিঁদুর মাখিয়ে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানান। এই ঐতিহ্যময় প্রথাকেই সিঁদুর খেলা নামে পরিচিত। শুধু সিঁদুর নিয়ে খেলাই নয়, বড়দের পায়ে প্রণাম করে, শাখা-সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানো হয়।
পুরাণে বর্ণিত কাহিনী অনুসারে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। টানা নয় দিন নয় রাত্রি মহিষাসুরের সঙ্গে দশোভূজা দেবী দুর্গার যুদ্ধ হয়েছিল। এরপর দশমীতে অধর্ম এবং অসত্যের উপর সত্যের জয় হয় যখন দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন। সেই জয় চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে দশমীর আগে বিজয়া শব্দের উল্লেখ করা হয়। দুর্গাপুজোয় সিঁদুর খেলার প্রথা বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। বাঙালি মহিলারা সিঁদুর খেলার সাথে ধুনুচি নাচের ঐতিহ্য অনুসরণ করেন। মনে করা হয় মা দুর্গা ধুনুচি নাচে প্রসন্ন হন এবং বিবাহিতাদের স্বামীর দীর্ঘায়ু বর দেন। এই উৎসবের ইতিহাস প্রায় ৪৫০ বছরের পুরনো।
পৌরাণিক শাস্ত্রমতে মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিভিন্ন দেবতার অধিষ্ঠান। যেমন আমাদের কপালে থাকেন স্বয়ং ব্রহ্মা, তিনি আবার সৃষ্টির দেবতা। তাই ব্রহ্মাকে তুষ্ট করতেই কপালে লাল সিঁদুর পড়েন সকলে। শক্তির সাধক কাপালিক বা পুরুষরাও কপালে রক্তবর্ণ সিঁদুর ধারণ করে থাকেন। আসলে ব্রহ্মা কে তুষ্ট রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা। অপরদিকে প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র মতে নারী হল শক্তি, সেই শক্তিকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য সিঁদুরের ব্যবহার শুরু হয়।
Comments.