বিশ্ব কবিতা দিবস পালনের তাৎপর্য এবং প্রাসঙ্গিকতা

কে বলেছে, এই প্রজন্ম কবিতা পড়ে না? দিব্যি রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে বাংলা কবিতার বই। বর্তমান প্রজন্মের তো বটেই, আগের প্রজন্মের কবিদের বইও এখনও বিস্তর জনপ্রিয়। কবিতার ভাষা ছন্দ ভাবনা সকলকেই চিরকালই প্রভাবিত করেছে। একটা সময় শুনে শুনে মানুষ মনে রেখেছে কবিতা ছড়া পদ্য। বর্ণ ভাষা জাতি নির্বিশেষে সারা পৃথিবীতে কবিতায় এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

কবিতা যেন কবির অন্তস্থ চেতনার ভাবনার প্রকৃষ্ট ফসল। এভাবেই শতাব্দিব্যাপী কবিতা হয়ে উঠেছে আপামর সাহিত্যানুরাগী তথা পাঠকের বেঁচে থাকার অনন্য উপকরণ। এখানেই কবিতার বিশেষত্ব। ছন্দ অলংকার উপমা ভাষা ও সর্বোপরি ভাবনার বুনোটে কবিতা যেন অচিরেই হয়ে ওঠে পাঠকের কাছে মনন শীল হৃদয়গ্রাহী। শুধুমাত্র কবিতাকে আরও বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে জনপ্রিয় করে তুলতে প্রসারিত করতে কবিতার ভবনকে আরো বেশি অর্থবোধক সমৃদ্ধময় প্রাসঙ্গিক করে তুলতে কবিতা দিবস পালন। বাস্তবিকার্থে প্রতিটা দিনেই পাঠকের কাছে কবিতা সময় যাপনের অনবদ্য রসদ। বিশ্ব কবিতা দিবসে সকল কবিদের কবিতায় প্রাণ খুঁজে পায় যেন এই শুভ কামনায় সকল কবিদের জন্য দিনটি উল্লেখযোগ্য। তারা যেন আরও বেশি মনোগ্রাহী সৃষ্টিশীল কবিতায় ভরিয়ে দেয় পাঠকের মননীল সত্তাকে।

বিশ্ব কবিতা দিবস পালনের নেপথ্যের ইতিহাসে। আগে অক্টোবর মাসে বিশ্ব কবিতা দিবস পালন করা হত। প্রথম দিকে কখনও কখনও ৫ অক্টোবর এই উৎসব পালিত হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রোমান মহাকাব্য রচয়িতা ও সম্রাট অগস্টাসের রাজকবি ভার্জিলের জন্মদিন স্মরণে ১৫ই অক্টোবর এই দিবস পালনের প্রথা শুরু হয়। ১৯৯৯ সালের ২১শে মার্চ ইউনেস্কো ঘোষণা করেন এই দিনটিকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবে পালন করার জন্য। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল বিশ্বব্যাপী কবিতা পাঠ, রচনা, প্রকাশনা এবং শিক্ষাকে উৎসাহিত করা। ইউনেস্কোর অধিবেশনে এই দিবস ঘোষণা করার সময় বলা হয়েছিল, এই দিবস বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক এবংআন্তর্জাতিক কবিতা আন্দোলনগুলিকে নতুন করে স্বীকৃতি ও গতি দান করবে। আবার কবিদের হাত ধরেই জন্ম নিয়েছে এক একটি জাতির আদি ইতিহাস। সেটা হোক ইলিয়াড, অডেসি, বিউলফ, ইনফার্নো, রামায়ণ, মহাভারত কিংবা মেঘনাদ বধ–এর ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে একেকটি জাতির ইতিহাস, বিশ্বাস, রাজনীতি, দর্শন–সর্বোপরি একটি সামগ্রিক আদর্শ।কবিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে রবার্ট ফ্রস্ট বলেছেন, ‘আবেগ যখন ভাবনা খুঁজে পায় আর ভাবনা যখন খুঁজে পায় শব্দ, তখন জন্ম নেয় কবিতা।’ এভাবেই কবিতা খুঁজে পেয়েছে তার ভাষা বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম।

কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন \'সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি\'। কথা টা সত্যিই। জীবনানন্দ দাশ লিখবেন কেন এটাতো ধ্রুব সত্য কথাই সকলেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন চেষ্টা করেন সফলতা পাবার কেউ কেউ সফলতা অর্জন করেন আর কেউ কেউ পারেন না। সফলতা পেয়ে থাকেন হাতেগোনা কয়েকজন। অথচ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন কখনও শয়ে শয়ে কখনও হাজারে হাজারে। তবুও পরিশেষে একটি কথা কবিতাকে ভালোবেসে কবিতাকে চর্চা করে কবিতার প্রসার ও বিস্তার ঘটুক সর্বোপরি কবিতা হয়ে উঠুক পাঠকের শাশ্বত ভালোলাগার মনন শীল রসদ। বিশ্ব কবিতা দিবসে আরো বেশি কবিতা ভাবনার আদান-প্রদানে গড়ে উঠুক কবি ও পাঠকদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক ও আলাপ আলোচনা। যেখান থেকেই সৃষ্টি হবে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় কবিতা সত্তা। আমরা আরো বেশি কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে কবিতাকে করে তুলি গতিশীল স্বার্থক ও প্রাত্যহিকতার সফর সঙ্গী।


 

Comments.

Leave a Comment.

Share this pen