ভাইফোঁটা নিয়ে রয়েছে নানান পৌরাণিক উপাখ্যান
ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হল পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষদিন। মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে ভাইবিজ। পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ভাইদুজ নামেও পরিচিত। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে বিজয়া দশমীর পর এই উৎসব পরিচিত ভাইটিকা নামে পালন করা হয়।
কথিত আছে, সূর্য ও তার পত্নী সংজ্ঞার যমুনা নামে কন্যা ও যম নামে এক পুত্র ছিল। পুত্র ও কন্যাসন্তানের জন্মদানের পর সূর্যের উত্তাপ স্ত্রী সহ্য করতে না পেরে প্রতিলিপি ছায়ার কাছে রেখে চলে যা সংজ্ঞার প্রতিরূপ হওয়াই কেউ ছায়াকে চিনতে পারেনা। কিন্তু ছায়ার কাছে ওই ২ সন্তান কখনও মায়ের মমতা, ভালবাসা পায়নি। দিনের পর দিন ধরে অত্যাচার করতে থাকে। অন্যদিকে সংজ্ঞার প্রতিলিপি ছায়াকে বুঝতে না পেরে সূর্যদেবও কোনও দিন কিছু বলেননি। ছায়ার ছলে স্বর্গরাজ্য থেকে বিতারিত হন যমুনা। একসময় যমুনার বিয়েও হয়। বিয়ে হয়ে যমের থেকে অনেক দূরে সংসার করতেন যমুনা। দীর্ঘকাল ধরে দিদিকে না দেখতে পেয়ে মন কাঁদে যমের।মন শান্ত করতে একদিন দিদির বাড়ি চলে যায় যমরাজ। প্রিয় ভাইয়ের আগমনে হাসি ফোটে দিদির মুখেও। দিদির আতিথেয়তা ও স্নেহে মুগ্ধ হয়ে ফেরত যাওযার সময় যম একটি বর চাইতে বলেন। তখন যমুনা বলে ছিলেন, এই দিনটি ভাইদের মঙ্গলকামনা চেয়ে প্রত্যেক বোন যেন ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হিসেবে পালন করা হয়। সেই বর দান করে যম পিতৃগৃহে চলে যান। যমের মঙ্গলকামনায় এ দিনটি পালন করায় যমরাজ অমরত্ব লাভ করেন। এ কাহিনি থেকেই নাকি প্রতি বছরে কার্তিক মাসের এই বিশেষ তিথিতে পালন করা হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়া।
ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে, কার্তিক শুক্লা দ্বিতীয়ার দিনে, যমুনা তার ভাই যমের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বর পেয়েছিলেন, যার কারণে ভাইফোঁটা যম দ্বিতীয়া নামেও পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে, যমরাজের বর অনুসারে যে ব্যক্তি এই দিনে যমুনায় স্নান করে যমের পূজা করবে, তাকে মৃত্যুর পর যমলোকে যেতে হবে না, তার ভাই অকাল মৃত্যু থেকে বাচবে। অন্যদিকে, সূর্য কন্যা যমুনাকে দেবী স্বরূপা মনে করা হয়, যিনি সমস্ত কষ্ট দূর করেন। এ কারণে যম দ্বিতীয়ার দিনে যমুনা নদীতে স্নান করে যমুনা ও যমরাজের পূজা করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পুরাণ অনুসারে, এই দিনে করা পূজায় যমরাজ প্রসন্ন হন এবং কাঙ্ক্ষিত ফল দেন।
ভাইফোঁটা নিয়ে কৃষ্ণ ও সুভদ্রার উপাখ্যানও শোনা যায়। কথিত রয়েছে, ধনত্রয়োদশীর পরের দিন চতুর্দশী তিথিতে নরকাসুরকে বধ করেন কৃষ্ণ। তারপর দ্বারকায় ফিরে আসলে বোন সুভদ্রার আনন্দের সীমা থাকে না। কৃষ্ণের আদরের বোন হল সুভদ্রা। কৃষ্ণকে অনেকদিন পর দেখতে পেয়ে তার কপালে বিজয়তিলক পরিয়ে দেন। কপালে ফোঁটা দিয়ে দাদাকে মিষ্টিও খেতে দেন। সেই থেকে নাকি ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা উত্সব পালন করা হয়
Comments.