শীতের সাত কাহন

হেমন্তের বাতাসে এখন হিম হিম স্পর্শ। শিশিরভেজা ঘাসের ডগায় মুক্তোর দানা। সকাল-সন্ধ্যা কুয়াশার চাদর মুড়ে দিচ্ছে চারপাশ। ভোরের কাঁচা রোদ, হিমেল হাওয়া প্রাণে তুলছে শিহরণ। কড়া শীতে কাঁপন ধরিয়েছে দুই ঠোঁট আর এই শীত নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন— এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তেরই জয়।

 শীতের পিঠা : শীতের সকাল মানেই নতুন কোনো পিঠার সুস্বাদ নেয়া। শীত এলে তাই পিঠা বানানো হয়ে যায় আনন্দের অনুষঙ্গ। ভাঁপা, কুশলি, চিতই, পাকান, ম্যারা, ফুলপিঠা, পাটি সাপটা, পুলি, শ্যাওই ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে চিতই বা রসপিঠা খাওয়া সবচেয়ে বেশি মজার। শীতের সময় গ্রামাঞ্চলে গেলে দেখা যায় বাড়িতে বাড়িতে উঠোনে পিঠা বানানোর ধুম। শীতে খেজুর রসের পায়েশ এক মজাদার ব্যাপার।

শীতে বেড়ানো : শীত এলে আমরা সাধারণত নানা প্রোগ্রাম করে থাকি। এর মধ্যে পিকনিক অন্যতম। তবে সময় হাতে থাকলে ভ্রমণের আদর্শ সময় হতে পারে এই শীত। চিড়িয়াখানা থেকে দার্জিলিং বা দীঘা, বাঙালির বেড়ানোর কাল এই শীতকাল।


শীতের সবজি : শীত কারে এ দেশে শীতের সবজির ধুম পড়ে যায় । শীতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শিম, টমেটো, গাজর, নতুন আলু, পেঁয়াজের ফুল, পালং শাক, ছোলার শাক— এমন আরও অনেক রকম সবজি রয়েছে। এসব পুষ্টিকর শাক-সবজি শীতকালে এদেশে নিয়মিতই খাওয়া হয়।


শীতের পাখি : শীতকালে বিভিন্ন দেশ থেকে আসে অতিথি পাখি। এই অতিথি পাখি পরিবেশকে নতুন প্রাণ চাঞ্চল্যতা দেয়। গ্রামবাংলার খাল বিলে দলে দলে আগমন ঘটে পরিযায়ী পাখিদের।


শীতের পোশাক : শীতের সময় গরম কাপড় পরা আরেক আনন্দ। এই দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর কারণে গরম কাপড় শুধুই শীতের সময়ই পড়া হয়। তাই সবাই শীতের কাপড় কিনতে ভিড় করেন বাজারে। যদিও নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষকে শীতে বেশ কষ্ট করতে হয়। তবুও এই শীতের পোশাক সকলের মধ্যেই বাড়তি আনন্দ যোগ করে।

খেজুরের রস: শীতকালের হাঁড় কাপানো ঠাণ্ডার মধ্যে কাঁচা খেজুরের রস খেতে পছন্দ করেন অনেকে। কেউ আবার এ রসকে প্রক্রিয়াজাত করে পিঠা-পুলি, পায়েস, গুড় তৈরি করে খেয়ে থাকেন। সারা বছর খেজুরের রস সংগ্রহ করা যায়। তবে শীতকালের খেজুরের রসই বেশি সুস্বাদু। শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে রসের পরিমাণ ও মানও কমতে থাকে।

শীতের ফুল: শীত মৌসুমে ফুলকাননের যেসব ফুল মানুষের মনকে মুগ্ধ করে তার মধ্যে ডালিয়া অন্যতম। লাল, চকোলেট, হলুদ, সাদা, গোলাপি, বেগুনি প্রভৃতি বর্ণের ডালিয়ার পাপড়ির সৌন্দর্য আর চমৎকার বিন্যাস সহজেই মানুষকে মুগ্ধ করে। কৃষ্ণকলি শীত মৌসুমের নিজস্ব ফুল। এ ফুল সাদা আর গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। শীত মৌসুমের আরেক ফুল কসমস। এ ফুল সাদা, লাল বা গোলাপি বর্ণের হয়। এছাড়া শীত মৌসুমের আরো যেসব জনপ্রিয় ফুল রয়েছে তার মধ্যে গ্যাজানিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, অ্যাস্টার, ডেইজি, সিলভিয়া, এন্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, ডায়ান্থাস, ফ্লক্স, ভারবেনা, কারনেশান, পপি, সূর্যমুখী, পর্টুলেকা, ক্যালেন্ডুলা, হলিহক, মর্নিং গ্লোরি, সুইট পি, অ্যাজালিয়া, জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস পিটুনিয়া অন্যতম। বারান্দা বা গ্রিলে ঝোলানো টবে লাগানোর জন্য পিটুনিয়া, ন্যাস্টারশিয়াস, অ্যাস্টার, ভারবেনা ইত্যাদি উত্তম। গ্রিলে লতিয়ে দেওয়ার জন্য নীলমণি লতা, মর্নিং গ্লোরি, রেল লতা, সুইট পি ভালো। এসব ফুলের রূপ সৌন্দর্য, পরশ মানুষের মনে স্বর্গীয় অনুভূতির জন্ম দেয়।


শীত ঋতুর প্রভাবে প্রকৃতি ও প্রাণিকুলের মাঝে কিছু ক্ষতিসাধন হলেও এ ঋতু আমাদের কৃষিকে সমৃদ্ধ করে। আমাদের জীবনকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরে তোলে। শীতকাল আমরা মনের মতো করে উপভোগ করি। তাই আমরা বলতে পারি আর্থসামাজিক উন্নয়নে শীত ঋতুর গুরুত্ব আমাদের দেশে অপরিসীম।

Comments.

Leave a Comment.

Share this pen