দোল পূর্ণিমা : বাংলার বসন্ত উৎসব

দেশের বিভিন্ন স্থানে দোল উৎসব পালিত হয়, আবার কোথাও পালিত হয় হোলি। তবে, মূলত বাঙালিরাই পালন করে থাকেন দোল উৎসব। আর, তার সূচনা হয়েছিল গৌড়বঙ্গে বৈষ্ণব ভাবধারার বিস্তারের মধ্যে দিয়ে। বৈষ্ণব ভাবধারার বিশ্বাস অনুযায়ী, দোল পূর্ণিমার দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে শ্রীরাধা ও অন্যান্য গোপীদের সঙ্গে রঙের খেলায় মেতেছিলেন। আর, সেই কারণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-শ্রীরাধা ও তাঁদের সখী গোপীরাই দোলযাত্রা উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। দোলনায় দোল খাওয়ার সঙ্গেই উৎসবে মেতে ওঠা। আর, তা থেকেই দোলযাত্রা উৎসবের উৎপত্তি। শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাবিলাস কবে শুরু হয়েছিল, তা বিস্তারিত জানা না-গেলেও, বিভিন্ন আখ্যান ও পদে সেই কাহিনি বর্ণিত আছে।

দোলযাত্রা আর হোলি কি এক? রঙের উৎসবের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। দোলাযাত্রার দিনেও \'হ্য়াাপি হোলি\' লিখে বার্তা পাঠান। দোলযাত্রা ও হোলি রঙের উৎসব হলেও তা আদতে আলাদা। এমনকি উৎসবের কারণও ভিন্ন। দোলযাত্রা হল প্রেমের উদযাপন। রাধা ও কৃষ্ণের সেই অমোঘ প্রেমের সাগরে ডুব দেওয়ার নামই দোল। যেখানে পরস্পরকে রং মাখিয়ে উদযাপন করা হয় দোল। যে রঙে কোনও জাত-পাত ধর্ম এমনকি লিঙ্গ নেই। যে রঙে রাঙিয়ে যান ধনী থেকে গরিব। যে রং বসন্ত ঋতুর। যে রঙে মানুষ বিলীন হন প্রেম ও ভক্তির সাগরে। আর হোলি হল, অধর্মের উপর ধর্মের বিজয়। যেখানে ভক্তের পাশে দাঁড়ান ভগবান। শাস্তি দেন দুর্বৃত্তকে। দোল ও হোলি আলাদা হলেও তাঁর ভরকেন্দ্রে কিন্তু শ্রী বিষ্ণু।

হোলির সঙ্গে জড়িয়ে শ্রী বিষ্ণুর আর এক রূপ। তিনি হলেন নৃসিংহ বা নরসিংহ। এ কাহিনিতে রয়েছেন আর এক চরিত্র। তিনি হলেন বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদ। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, রাজা হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ। সে বিষ্ণুভক্ত। অথচ অসুররাজ  হিরণ্যকশিপুর বিষ্ণুকে নিজের শত্রু ভাবতেন। তাঁর ঘরেই কিনা বিষ্ণুর পুজো করছে! তা-ও আবার নিজের ছেলে! প্রহ্লাদকে মারার কৌশল করলেন হিরণ্যকশিপুর। নানা ভাবে বিফল হয়ে দায়িত্ব দিলেন বোন হোলিকাকে। যে হোলিকা বরপ্রাপ্ত, আগুন তাঁকে পোড়াতে পারবে না। প্রহ্লাদকে সঙ্গে নিয়ে আগুনের কুণ্ডে ঝাঁপ দিলেন হোলিকা। তবে আগুনের তাপ থেকে বাঁচতে পারেননি হোলিকা। তিনি জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যান। বেঁচে যায় প্রহ্লাদ। তাঁর গায়ে আগুনের আঁচ পর্যন্ত লাগেনি। তার পর থেকেই অশুভ শক্তির পরাজয় ও শুভ শক্তির জয় উদযাপন করতে প্রতিবছর চলে হোলিকা দহন। যা হোলির আগের দিন হয়। বাংলায় দোলের আগের দিন অনুরূপ ন্যাড়া পোড়ানো হয়।

দোলযাত্রা উৎসব শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসব নামে পরিচিত। শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালনের রীতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই চলে আসছে। অতীতে শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ে বসন্তের আগমন উপলক্ষে একটি ছোটো ঘরোয়া অনুষ্ঠানে নাচগান, আবৃত্তি ও নাট্যাভিনয় করা হত। পরবর্তীকালে এই অনুষ্ঠানটি পরিব্যাপ্ত হয়ে শান্তিনিকেতনের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব বসন্তোৎসবের আকার নেয়। ফাল্গুনী পূর্ণিমা অর্থাৎ দোলপূর্ণিমার দিনই শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসবের আয়োজন করা হয়।


 

Comments.

Leave a Comment.

Share this pen